কাঠের সাহায্যে পানীয় জল শোধন
একটি নতুন ধরনের ‘ওয়াটার ফিল্টার সিস্টেম’ ভবিষ্যতে বহু মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারবে৷ এটির নির্মাণ পদ্ধতিও অত্যন্ত সহজ৷ এমনটাই মনে করেন একদল গবেষক৷ তবে প্রশ্ন এই যে, কতটা নিরাপদ এই পদ্ধতি?
ধরা যাক আপনাকে কেউ বললো খুব সাধারণ এক টুকরা কাঠ দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যাবে৷ বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে নিশ্চয়ই৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস-এর ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির এক গবেষক টিম এটির বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন৷
কয়েক বছর আগে জীববিজ্ঞানীদের এক কনফারেন্সে আলোচনা শুনে আইডিয়াটা মাথায় আসে যন্ত্র প্রকৌশলী রহিত কার্নিকের মাথায়৷
জাইলেম-এর ভূমিকা
বিষয়টি ছিল উদ্ভিদ ও তাদের জাইলেম৷ অর্থাৎ উদ্ভিদের এক জটিল কাঠের টিসু৷ এ টিস্যুর মাধ্যমে মাটি ও শেকড় থেকে জল ও খনিজ পদার্থ কাণ্ড, ডালপালা ও পাতায় পরিবহণ করে থাকে উদ্ভিদ৷
রহিত কার্নিক চিন্তা করলেন, উদ্ভিদের জাইলেমকে প্রাকৃতিক ও সুলভমূল্যের ফিল্টার হিসাবেও তো ব্যবহার করা যেতে পারে!
জাইলেমে রয়েছে অতি ক্ষুদ্র ছিদ্রসহ ঝিল্লি৷ অনেকটা ছাকনির মতো৷ অত্যন্ত ক্ষুদ্র ন্যানোমিটার আয়তনের কণাও আটকে যায় তাতে৷ এতে প্রাকৃতিক উপায়েই জল পরিবহণের সময় উদ্ভিদের ভেতরে বুদ্বুদ তৈরিতে বাধার সৃষ্টি হয়৷ তা না হলে উদ্ভিদের জন্য মারাত্মক হতো৷ যেমন হতে পারে মানুষের রক্তপ্রবাহে বাধা পেলে৷
কার্নিকের আশা, এই ঝিল্লি শুধু বাতাসের বুদ্বুদই নয়, ব্যাকটেরিয়াকেও ফিল্টার করতে পারবে৷ এর ফলে দূষিত জল আবার পান যোগ্য হবে৷
সাদা-মাটা ফিল্টারও কার্যকর
এই বিজ্ঞানী পাইন গাছের কাঠ ও নল দিয়ে সাদামাটা একটা ফিল্টার তৈরি করেন৷ এরপর জলে লাল রং মিশিয়ে তা ফিল্টার করেন৷ সত্যি সত্যি ফিল্টার দিয়ে যে তরল পদার্থটা বের হলো, তা একেবারে পরিষ্কার৷ লাল রংটা জাইলেমের ঝিল্লিতে জমা হয়ে থাকে৷ব্যাকটেরিয়া নিয়ে৷ এক ধরনের কোলি ব্যাকটেরিয়া ছেড়ে দেন জলে৷ ‘‘আমাদের প্রথম প্রচেষ্টাই দেখিয়েছে, ৯৯.৯৯ শতাংশ ব্যাকটেরিয়াই জাইলেম দিয়ে ফিল্টার করা সম্ভব হয়েছে৷'' বলেন কার্নিক৷ মাত্র একটি ফিল্টারই প্রতিদিন চার লিটার পর্যন্ত পানীয়জল পরিষ্কার করতে পারে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী,বছরে ১.৬ মিলিয়ন মানুষ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত জল পান করে নানা অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়৷ এর মধ্যে ৯০ শতাংশ শিশু৷ সাধারণত জল শোধন করার জন্য ক্লোরিন কিংবা কার্বন ফিল্টার ইত্যাদি পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়৷ এ সব পদ্ধতি হয় বেশ খরচসাপেক্ষ নয়ত বেশি পরিমাণ জলে তেমন কার্যকর নয়৷ এছাড়া এ জন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুতশক্তি৷ যে সব অঞ্চলে জল দূষণের প্রকোপ বেশি, সেসব অঞ্চলে বিদ্যুৎশক্তির অভাবও প্রকট৷ কার্নিক বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস জাইলেম ফিল্টারের মাধ্যমে সবার জন্য সহজে ও সুলভমূল্যে জলপরিশোধন করা সম্ভব৷ কোনো রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ছাড়াই৷''
প্রয়োজন আরো কিছুটা সময়
তবে প্রচলিত পদ্ধতিগুলির সঙ্গে জাইলেম পদ্ধতির তুলনা করার সময় এখনও আসেনি৷ এজন্যা আরো কিছু সময় লাগবে৷ বলেন এই বিজ্ঞানী৷ বর্তমানে কার্নিক ও তাঁর টিম বিভিন্ন ধরনের কাঠের ফিল্টারের কার্যক্ষমতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন৷ এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত যে কোনো কোনোটি ব্যাকটেরিয়া দূর করার ব্যাপারে আরো কার্যকর হবে৷
থাকে৷ ফেডারেল পরিবেশ দপ্তরের হার্টমুট বার্টেল সমালোচনা করে বলেন, ‘‘এই ধরনের ফিল্টার পদ্ধতিকে বলা যায় অনেকটা ‘নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো'৷ আমাদের স্বাস্থ্যসম্মত পানীয়জলের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই৷''
আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে
অন্যদিকে প্রযুক্তি সংক্রান্ত সাহায্য সংস্থা, ‘টেকনিশেস হিল্ফসওয়ার্ক'-এর নিকোল সান্ডার এই পদ্ধতির ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন৷ কেননা প্রচলিত ফিল্টার পদ্ধতির সঙ্গে মিল রয়েছে এটির৷ তবে এই পদ্ধতির উন্নয়ন ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিকে লক্ষ্য রাখা হবে বলে জানান তিনি৷
রহিত কার্নিক জানেন, তাঁর টিমটির সামনে অনেক কাজ বাকি৷ একদিন হয়ত জলের কলে এই ধরনের একটি ফিল্টার লাগিয়ে পাওয়া যাবে জীবাণুমুক্ত জল৷ এই স্বপ্ন তাঁর৷ ‘‘আমরা আশা করি, আমাদের পদ্ধতি সেইসব জায়গায় কাজে লাগানো যাবে, যেখানে অন্যান্য পদ্ধতি ব্যয়সাপেক্ষ কিংবা সহজলভ্য নয় এবং তা যত দ্রুত সম্ভব ততই ভালো'', বলেন গবেষক কার্নিক৷সৌজন্য স্বীকারঃ ...http://www.dw.de
0 comments:
Post a Comment