বর্তমানে গুগল আর্থ এর সৌজন্যে ভার্চুয়াল পর্বতোরোহন দৈনন্দিন কাজে পরিণত হয়েছে। এখানে জীবননাশের কোন ঝুঁকি নেই, কিংবা নেই বেস কঠিন প্রশিক্ষনও। তবে কাছ থেকে পর্বতে ওঠার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পাবেন না এখানে। কিন্তু ভার্চুয়াল ভাবেই দেখে নিতে পারবেন এই সব সুবিশাল পর্বতমালার খুঁটিনাটি সব কিছুই। বেশিরভাগ পর্বতই ভয়ংকর দুর্গম। কিন্তু এদের মাঝে কিছু এত বেশি দুর্গম যে কোনটাতেই আপনি জনবসতি দেখতে পাবেন না। বরং প্রতিবছর এখানে মারা যায় অসংখ্য মানুষ। আসুন পরিচিত হয় এরকম নয়টি পর্বতমালার সাথে।
ভ্যানসন মাসিফ,এন্টাকর্টিকা
এন্টার্কটিকা মহাদেশের সর্বোচচ পর্বত এই ভ্যানসন মাসিফ।এ টি সমদ্র উপকুল থেকে ১৬০৫০ ফুট উপরে এবং দক্ষিন মেরু থেকে প্রায় ৭৫০ মাইল দূরে অবস্থিত। ১৯৫৮ সালে আমেরিকান নেভির গবেষক কার্ল ভ্যানসন এটি আবিষ্কার করেন। পর্বোতোরোহীদের জন্য এখানে ভ্রমণ তেমন সুখকর নয় কারণ, এখানের তাপমাত্রা অনেক ঠান্ডা প্রায় মাইনাস ২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট এবং একই সাথে রয়েছে প্রচন্ড বাতাস।
মন্ট ব্লাংক, ফ্রান্স
এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫ হাজার ৭৮২ ফুট উচু ।এটিই আল্পস পর্বতের সর্বোচচ শৃংঙ্গ। মন্ট ব্লাংক পর্বতটি ফ্রান্স ও ইতালি দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত। ১৭৮৬ সালে সর্বো প্রথম এই পর্বতে আরোহন করা হয়।
কিলিমাঞ্জারো,তানজানিয়া
মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো, তানিজানিয়ার সুপ্ত আগ্নিয়গিরি।সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচচতা প্রায় ১৯ হাজার ৩৪১ ফুট।কিলিমাঞ্জারোই আফ্রিকার সর্বোচচ শৃঙ্গ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামিট বেস ক্যাম্প এই পর্বতটিকে বলা হয়।পর্বতোরোহীদের জন্য এটি খুবই বিপদজনক। প্রতিবছর প্রায় ১০-১২ জন মানুষ এখানে মারা যায়।
মাউন্ট সেন্ট হেলেন্স,আমেরিকা
আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতি আর অর্থনৈতিকভাবে বিধংসী অগ্ন্যুতপাত হয় এই পর্বত থেকে।১৯৮০ সালের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় ৫৭ জনের প্রাণহানি হয় সাথে ২৫০ এর মতো বাড়ি ধবংস হয় এবং ১৮৫ মাইল হাইওয়ে ধবংস হয়ে হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচচতা প্রায় ৮ হাজার ৩৬৪ ফুট।১৯৮০, আধুনিক পৃথিবী এই দিন দেখেছিল আগ্নেয়গিরির বিরল আর ভয়ঙ্কর এক রূপ। মাউন্ট সেন্ট হেলেন তার অগ্নুৎপাত দিয়ে পৃথিবীর মানুষকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল, ঠাঁই করে নিয়েছে সে ইতিহাসের পাতায়। সেন্ট হেলেনের ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য্য মানুষ আজও ভোলেনি ।
আরিনাল আগ্নিয়গিরি,কোষ্টারিকা
আরিনাল আগ্নেয়গিরিটি কোষ্টারিকার আরিনাল সমুদ্র উপকুলে অবস্থিত।সমুদ্রতল থেকে এর উচচতা ৫ হাজার ৩৫৮ ফুট । সবর্শেষ এই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুতপাত হয় ১৯৬৮ সালে।সেবার এর থাকায় ধবংস হয়ে গিয়েছিল তাবাকন নামক শহর।
ফুজি পর্বতমালা,জাপান
ফুজি পর্বতমালা জাপানের সর্বোচচ পর্বতমালা। সমুদ্রতল থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১২৩৮৯ ফুট । এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পন পর্বতমালা। ফুজি একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। সর্বশেষ ১৭ শতকে এতে অগ্ন্যুতপাত হয়েছিলো। মাউন্ট ফুজির জ্বালামুখটি আশ্চর্যরকমভাবে প্রতিসম যা বছরের বেশ কয়েক মাস বরফাচ্ছাদিত থাকে। এটি জাপানের একটি সুপরিচিত প্রতীক এবং জাপানের শিল্পকলা ও স্থিরচিত্রে প্রায়শই এটিকে দেখা যায়। পর্যটক ও পর্বতারোহীদের কাছে মাউন্ট ফুজি একটি জনপ্রিয় স্থান। প্রতি বছর প্রায় ২ লাখেরও বেশি মানুষ চারটি রুটে এই পর্বতে আহোরণ করে।
হিমালয়,তিব্বত
পৃথিবীর সর্বোচচ উচচতার এই পর্বতমালা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৯ হাজার ২৯ ফুট উঁচু। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, চীন, নেপাল ও ভূটান এশিয়ার এই পাঁচ দেশে বিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালা। ১৯৫৩ সালে নেপালের এডমন্ড হিলারী ও নিউজিল্যান্ডের তেনজিং হিমালয় পর্বতমালায় প্রথম আরোহন করেন। আপনি যদি হিমালয় পর্বত জয়ের ইচ্ছা করেন তাহলে ফিটনেস খরচ বাবদ সামিট প্রশিক্ষন কেন্দ্রকে আপনাকে দিতে হবে ৪০০০০ মার্কিন ডলার।
ফগো পর্বতমালা, কেপ ভার্দে
ফগো দ্বিপ আফ্রিকার পশ্চিম তীরে অবস্থিত। ১৯৯৫ সালে ৯২৮১ ফুট উচচতায় অগ্ন্যুতপাত হয়। এতে কলরেডা গ্রাম ধবংস হয়ে যায়।
ভিসুভিয়াস,ইতালি
ইতালির নেপলস উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি আগ্নেয়গিরি। নেপলস থেকে ৯ কিলোমিটার পূর্বে সমুদ্রউপকূলের খুব কাছে এর অবস্থান।সর্বোশেষ খিষ্টপূর্ব ৭৯ অব্দে এখানে অগ্ন্যুৎপাত হয়।বর্তমানে এটিকে বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে গণ্য করা হয় কেননা এর আশপাশের এলাকায় ৩,০০০,০০০ মানুষ বসবাস করে এবং এটির বিস্ফোরণের মত অগ্ন্যুৎপাতের প্রবণতা রয়েছে । এটি পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল অগ্নুৎপাতপ্রবণ এলাকা ।
0 comments:
Post a Comment